মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:: আপনি টাকা দেন, চা খরচের জন্য লাগবে, তাহলে আগামীকালই আপনাকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়া হবে। এমন কথায় তড়িঘড়ি করে একটি ছাগল দুই হাজার টাকায় বিক্রি করে এবং তিন হাজার টাকা সুদের উপর নিয়ে দেওয়া হয় ভূমি অফিসের এক কর্মচারীকে। টাকা নিয়েও ঘর না দেওয়ার অভিযোগটি উঠে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক রবি চন্দ্রের বিরুদ্ধে। টাকা দিয়েও ঘর না পাওয়ার ভুক্তভোগী পৌর শহরের ভান্ডারা গ্রামের তকদির আলী ওরফে লেদু’র স্ত্রী ফাতেমা (৪৫)।
গত রবিবার ফাতেমার একজন আত্মীয় উপজেলা পরিষদের সামনের মার্কেটে রবি চন্দ্রকে বলে টাকা নিয়ে এক বছরেও ঘর দিলি না, টাকাটা দে। প্রতি উত্তরে রবি বলেন, উপজেলা ভূমি অফিসের নাজিরের কাছে যা চার হাজার টাকা দিবে, এ কথায় ফাতেমার ঐ আত্মীয় বলে- তুমি টাকা নিলা ৫ হাজার আর টাকা এক বছর পর ফেরত দিবা ৪ হাজার এ নিয়ে তর্ক হচ্ছিল দুই জনের মধ্যে। সেখানে উপস্থিত এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চাইলে সটকে পড়ে ভূমি অফিসের কর্মচারী রবি। পড়ে ফাতেমার আত্মীয়’র কাছে ফাতেমার নাম্বার নিয়ে মুঠোফোনে কথা বললে এ প্রতিবেদককে ভুক্তভোগী জানান, ছাগল বিক্রি করে ও সুদের উপর টাকা নিয়ে রবিকে টাকা দিয়েছিলাম। টাকা দিলেই সে নেকমরদ এলাকার কুমরগঞ্জ গ্রামের একটি খাস জায়গায় আমাকে ঘরসহ বুঝিয়ে দিবে। টাকাটা নিয়ে পরে আজ কাল করে বিগত এক বছর সে আমাকে হয়রানী করেছে।
ফাতেমা আরো জানান, এখন শুনছি সে আমাকে টাকা ফেরত দিবে যা দিয়েছি তার থেকে এক হাজার কম। ফাতেমা আক্ষেপ করে বলেন, পৌরশহরের একটি বে-সরকারী ক্লিনিকে দুই হাজার টাকা বেতনের আয়া’র চাকুরী করে জীবিকা নির্বাহ করছি। নিজস্ব কোন জায়গা জমিও নেই। যদি সরকারীভাবে এ ঘরটি পেতাম তাহলে উপকৃত হতাম। এখন ভূমি অফিসের রবি আমাকে ঘর না দিয়ে টাকা ফেরত দিচ্ছে। এখন আমি কোথায় এ দুঃখের কথা বলি, কে আমার মত অসহায়ের পাশে দাঁড়াবে, আমাকে একটি মাথা গোঁজার ঠায় করে দিবে। এদিকে ফাতেমার ঐ আত্মীয় আব্দুল করিম জানান, গত রবিবার রাতে উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির শাকিব আমাকে ডেকে ৪ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। এর সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির শাকিব মুঠোফোনে জানান, এসিল্যান্ডের নির্দেশে আমি টাকা নিয়েছি। তবে টাকাটা কিসের টাকা সেটা আমি জানিনা। উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক রবি চন্দ্রের বক্তব্য নিতে তার মুঠোফোনে সোমবার ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রীতম সাহা সোমবার মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি আমাকে উপজেলা কৃষি অফিসের ড্রাইভার জানালে আমি তাকে বলেছিলাম এই রকম হলে, ঐ ভূক্তভোগী টাকা ফেরত পাবে। সে মোতাবেক টাকা রবি’র বেতন থেকে কেটে মহিলাকে দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রবি’র বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহিলাটি ঘর পাবে কিনা প্রশ্নে বলেন, যদি তিনি সত্যিকারের ভূমিহীন হন অবশ্যই ঘর পাবেন।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির সোমবার মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি আমি গুরত্ব সহকারে দেখছি।